আদালতের রায় ঘোষণার পর বহুচর্চিত আকাঙ্খা শর্মা ও উদয়ণ দাস ঘটনার পূণরাবৃত্তির ঘটনা প্রকাশ্যে এলো বাঁকুড়ায়। নিজের স্ত্রীকে খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে বর্ধমানের বেলনা গ্রামের মুলুক চাঁদ সেনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বাঁকুড়া জেলা আদালত। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে সোমবার বিচারক এই নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বাঁকুড়া শহরের আশ্রম পাড়ার বাসিন্দা পূজা বাউরীর সঙ্গে বর্ধমানের বেলনা গ্রামের মুলুক চাঁদ সেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মুলক চাঁদ তার স্ত্রী পূজার উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালাতো। এনিয়ে একেবারে শুরুর দিকে পূজা তার বাপের বাড়িতে বিষয়টি গোপন রাখে। পরে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল থেকে পূজা বাউরী 'নিখোঁজ' হয়ে যায়। পরে তার পরিবারের তরফে বাঁকুড়া মহিলা থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ জানালে পুলিশ মুলুক চাঁদের বাবা পিরু সেন ও মা শ্যামলী সেনকে গ্রেফতার করে। মূল অভিযুক্ত মুলুক চাঁদ সরেন ফেরার ছিল। পরে তদন্তকারী অফিসার বদল হয়। এই অবস্থায় টেলিফোন টাওয়ার ও অন্যান্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২৭ আগষ্ট ২০০০ তারিখে পুলিশ মুলুকচাঁদকে গ্রেফতার করে। এর পর মুলুকচাঁদের দেওয়া সূত্র ধরে ম্যাজিস্ট্রেট, বর্ধমানের এসপি, শক্তিগড় থানার ওসি, বাঁকুড়া মহিলা থানার পুলিশ, তদন্তকারী অফিসার ও স্থানীয় জনপ্রতিধিদের উপস্থিতিতে পুলিশ বেশ কিছু হাড়গোড়, শাঁখা, পলা ও কাপড়ের টুকরো উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র দেখে মৃতার পরিবারের লোকজন সনাক্তরণের পর নিয়মানুযায়ী ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক টেস্ট করা হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে বিচারক এদিন অভিযুক্ত মুলুক চাঁদ সেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
সরকারী আইনজীবি অতনু দে এদিন এই খবর জানিয়ে বলেন, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন মূল অভিযুক্তের বাবা পিরু সেন মারা যান, মা শ্যামলী সেনকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন। তবে মুলুক চাঁদ সেনকে খুনের অভিযোগে ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছ'মাসের জেল ও স্বাক্ষ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ২০১ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের জেল হেফাজতের নির্দেশ বিচারক দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
তবে আদালত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে সাজাপ্রাপ্ত মুলুক চাঁদ সেনকে উপস্থিত সাংবাদিকরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন কিনা প্রশ্ন করলে ‘হ্যাঁ’ বাচক ঘাড় নাড়েন তিনি।