• Mon. Dec 23rd, 2024

Adenovirus : ভয়ঙ্কর হচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাসের থাবা ! ভাইরাস ডেকে আনছে ফুসফুসের ভয়ঙ্কর রোগ

অ্যাডিনোভাইরাসের ( Adenovirus ) থাবা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হচ্ছে। গত বেশ কয়েক মাস ধরে খানিকটা স্বস্তি ছিল কোভিড সংক্রমণের সংখ্যায়, নিম্নমুখী ছিল কোভিড গ্রাফ। কিন্তু আবার নতুন করে চিন্তা বাড়িয়ে, সংক্রমণের সংখ্যা বাড়িয়ে এরই মাঝে আবার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যাডিনোভাইরাস আতঙ্ক। এবার সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের নিয়ে নতুন নির্দেশ দেওয়া হল।

আরটিপিসিআর পরীক্ষা থেকে ভেন্টিলেটর ঠিক আছে কিনা, সব দেখে নিতে হবে বলে নির্দেশ এসেছে হাসপাতালগুলির কাছে।

এর আগেও অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এবার ফের একবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মারণ এই ভাইরাস প্রাণ কাড়ল দুই একরত্তির।

জ্বর ও শ্বাসকষ্টে নিয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এই রাজ্যে। সেখানে আবার এমন ঘটনা আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করেছে। সবার অ্যাডিনোভাইরাস হচ্ছে এমন নয়। তবে আতঙ্ক থাকছে।

সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল, চিত্রটা সব জায়গাতেই এক। কয়েকজন শিশুর অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক যে তাদের ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে একটাও শয্যা খালি নেই। চিকিত্‍সকরা জানিয়েছেন, এর আগে ২০১৮-১৯ সালে এই ভাইরাস দেখা গিয়েছিল। তারপর ফের ২০২৩ সালে ফিরে এল অ্যাডিনোভাইরাস

মূলত যে শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে থেকে ৯০ শতাংশ শিশুর শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। চিকিত্‍সকরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে অনেকেই অ্যাডিনোভাইরাসের শিকার। তবে উদ্বেগের বিষয় হল, অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষদের শ্বাসকষ্ট বা পেটের সমস্যা হত। কিন্তু এখন ভেন্টিলেশনেও রাখতে হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে এই ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

অ্যাডিনো ভাইরাস (AdenoVirus) ও শিশুদের শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য ভবন (Swastha Bhavan) নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যু ঠেকাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য ভবনের নয়া নির্দেশিকা:

১. রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের (Oxygen) ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে।
২. ভেন্টিলেটর (Ventilator) প্রস্তুত রাখতে হবে , যাতে শিশুদের কোন সমস্যা না হয়।
৩. অবশ্যই পর্যাপ্ত বেড রাখতে হবে এবং হাসপাতালে শিশু বিভাগ না থাকলে তা তৈরি করতে হবে।
৪. খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে । পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে । শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিলে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. যদি শিশু জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদেরকে স্কুলে কিংবা বাইরে না পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৬. টানা যদি তিন থেকে পাঁচ দিন জ্বর থাকে অথবা রক্ত অক্সিজেনের মাত্রা ৯২% থেকে নিচে নেমে যায় তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে শিশুকে।

প্রসঙ্গত, ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে এই অ্যাডিনোভাইরাস । স্বাস্থ্যভবনের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে । শুধু কলকাতা নয়, জেলাগুলিতেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থেকে শুরু করে বেড রাখার কথা সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। যদি কোনও শিশুর 3-5 দিন জ্বর থাকে এবং তার সঙ্গে শ্বাসজনিত সমস্যাও দেখা যায় তাহলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভরতির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদি কারও খাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায় তাহলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা ।

পৌরসভার পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । করোনা মোকাবিলার সময় যে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেইমতোই অ্যাডিনোভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।

চিকিত্‍সকরা বলছেন, করোনার মতো রূপ বদলে ভয়ঙ্কর হচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাসও। আর সে কারণেই, পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না অনেক শিশু।

চিকিত্‍সকরা বলছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসে ( Adenovirus ) আক্রান্ত অনেক শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর, তাঁদের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

নতুন করে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট ( Breathing Problem ) । চিকিত্‍সকের অনেক বলছেন, করোনার মতো অ্যাডিনো ভাইরাসও ভ্যারিয়েন্ট বদলে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, ‘ যারা আইসিইউ থেকে বের হচ্ছে, এর অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য সংক্রমণ ফুসফুসকে আক্রমণ করছে। ২০১৮ তে যখন মহামারী হয়েছে, তখনও এরকম হয়েছিল। অসুখ সেরেও সারছে না। ‘

অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণে যে কাশি হচ্ছে, তা কমাতে ওষুধ, সিরাপ কিংবা ভেপার (বাষ্প) নেওয়া, কিছুই তেমন কাজে দিচ্ছে না। বরং চিকিত্‍সকেরা জানাচ্ছেন, ভরসা ইনহেলার। একই রকম ভাবে বাড়াবাড়ি করছে চোখের সমস্যাও।

চলতি মরসুমে এক বার কাশি ধরলে, ১৫ দিনের আগে নিস্তার নেই। শহর থেকে জেলা, সর্বত্র অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন অধিকাংশ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

চিকিত্‍সকদের মতে, মাঝবয়সিরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁদের জ্বর কমে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন কাশি থেকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ডাক্তারখানায় দিনে যত রোগী আসছেন, তার বেশিরভাগ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত।

সে ক্ষেত্রে ইনহেলার থেরাপিতে উপশম মিলছে।কিন্তু ইনহেলার নিতে নারাজ বহু রোগীই। তাঁদের ধারণা, ওই থেরাপির অর্থ, ফুসফুসের পাকাপাকি কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই বিভ্রান্তি সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে বলে মত মেডিসিনের চিকিত্‍সক এর।

অ্যাডিনোভাইরাসে বড়দের কাশি বা চোখের সমস্যায় বাড়াবাড়ি হচ্ছে , এই প্রসঙ্গে ভাইরোলজিস্ট এর ব্যাখ্যা, অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে বংশবিস্তার করে। শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিয়ে তা টনসিল ও অ্যাডিনয়েডের লিম্ফয়েড টিসুতে বহু দিন থেকে যায়। আসলে, অ্যাডিনোভাইরাসের বহিরঙ্গে থাকা পেরেকের মতো অংশটি লিম্ফয়েড, চোখের কনজ়াংটিভাল-সহ বিশেষ কিছু কোষকে আক্রমণের জন্য বেছে নেয়। তাতে কোষে সংক্রমণ ও প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়।

কনজ়াংটিভাইটিস পুরনো সমস্যা হলেও অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, জানাচ্ছেন চক্ষু চিকিত্‍সক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হোম পেজ
এক নজরে
দেশ
খেলা
বিনোদন