হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি ডেকে আনে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, শরীরচর্চায় অনীহা— এই তিন বদভ্যাস! আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হল বছর ১৯-এর তরুণের। ঘটনাটি ঘটেছে তেলঙ্গানার নির্মল জেলার পর্দি গ্রামে। বিয়েবাড়িতে তরুণের মৃত্যুর ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে।
অনেকে ই ঘুম উড়েছে সমাজমাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়া মাত্র।
শনিবার রাতে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা মুত্যম আত্মীয়ের বিয়ের আসরে নাচানাচি করছিলেন। ভাবতেও পারেননি যে, মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দক্ষিণের জনপ্রিয় নাচের তালে নেচে সকলের মনোরঞ্জন করছিলেন যুবক। নাচতে নাচতে হঠাত্ই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। বিপদের আশঙ্কা করে তাঁকে ওঠানোর চেষ্টা করেও লাভ না হওয়ায় নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
ভিডিও লিংক : https://twitter.com/zeeshan_zahed/status/1629751372194148354?s=20
সব বয়সিদেরই কাবু করছে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বা সাইলেন্ট অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (এসএএমআই)। কেকে, সিদ্ধার্থ শুক্ল, সিদ্ধার্থ সূর্যবংশীর, রাজু শ্রীবাস্তবের উদাহরণ মৃত্যুভীতি তৈরি করছে অল্পবয়সিদের মনে।
কোনও হার্ট অ্যাটাককে তখনই ‘সাইলেন্ট’ বলা হয় যখন রোগীর মৃদু উপসর্গ থাকে কিংবা কোনও উপসর্গই থাকে না কিংবা এমন ধরনের লক্ষণ থাকে যা সহজেই রোগী এড়িয়ে যান কিংবা অন্যান্য অসুস্থতার জন্য বুঝতে পারেন না। সাধারণত হার্টে যথাযথভাবে অক্সিজেন না পৌঁছালে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞের মতে, সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক (Silent Attack Attack) হল নিঃশব্দ ঘাতক। এক্ষেত্রে এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক শরীরের ১২টা বাজিয়ে দিতে পারে একবারেই। এক্ষেত্রে হার্ট খুব দুর্বল হয়ে যায়। এমনকী কাজ করাও ছেড়ে যায়। এবার হার্ট কাজ করা ছেড়়ে দিলে গোটা শরীরেই পৌঁছাতে পারে না রক্ত।
সমস্ত ধরনের হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে প্রায় ৫০% থেকে ৮০% মানুষের সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।
অকস্মাৎ হার্ট অ্যাটাক আর তাতেই শেষ জীবন৷ এই ঘটনা চল্লিশের কোটা পেরোতে না পেরোতেই হামেশাই ঘটছে । তবে সত্যিই কি আকস্মিক হয় না কি হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত থাকে?
সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক প্রাথমিকভাবে বোঝা যায় না তাই ক্ষতি কতটা হতে পারে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণগুলি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, বেশিরভাগ সময়ে হার্ট অ্যাটাকের আগে রোগীর শরীরে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেগুলি চিহ্নিত করে ডাক্তারের পরামর্শ নিলেই কিন্তু বিপদ এড়ানো সম্ভব।
এই অসুখ যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে। তবে এই অবস্থাগুলিতে আশঙ্কা থাকে বেশি-
- কিছু গুরুতর শারীরিক পরিশ্রমের পর
- মানসিক চাপ থাকলে
- হঠাৎ করে বাড়তি শারীরিক পরিশ্রম করলে
- শীতে বাইরে কাজ করলে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানাচ্ছে, মহিলা ও পুরুষ যে কোনও মানুষের এই রোগ হতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে যে মহিলাদের মধ্যে এই অসুখ অনেকটাই বেশি হয়। সেই পরিস্থিতিতে সাবধান হয়ে যান।
এই রোগের উপসর্গ একবারেই হার্টের রোগের মতো নয়। কিছু কিছু মানুষের দেখা যায়-
- ফ্লুয়ের মতো লক্ষণ
- বুকের পেশিতে ব্যথা হতে পারে
- ক্লান্ত লাগতে পারে
- মনে হতে পারে আপনার হজমের সমস্যা হয়েছে
তবে সবসময় যে আগে থেকে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বোঝা যায় এমনটা নাও হতে পারে। আবার বেশ কিছুদিন ধরে আভাস দিলেও অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। ফলে এই ধরনের অনেক রোগীর শরীরে হার্ট অ্যাটাকের রিক্স ফ্যাক্টর থাকলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে বিপদ ডেকে আনে।
কিছু লক্ষণ গুলি হল:
১. মাথা ঘোরা কিংবা হালকা মাথা ব্যথা
মাথা ঘোরার অনুভূতি হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়। এই উপসর্গটি ঠান্ডা ঘাম, বুকে আঁটসাঁটো ভাব বা শ্বাসকষ্টের সঙ্গেও দেখা যেতে পারে। কিছু মানুষ জ্ঞান পর্যন্ত হারাতে পারেন। সেক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণ খেয়াল করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি হয়
বিভিন্ন কারণে আমাদের বুকে ব্যথা হতে পারে। তবে, বুকে ব্যথা ও অস্বস্তি হার্ট অ্যাটাকের সতর্কতামূলক লক্ষণ হতে পারে। ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাকে বুকের মাঝখানে বা বাম দিকে অস্বস্তি হয় যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা তারপর চলে যায় এবং আবার সেই ব্যথা কিছুক্ষণ পরে ফিরেও আসে।
৩. বমি বমি ভাব এবং অম্বল সহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন পেটে ব্যথা, বদহজম, বুকজ্বালা এবং বমি বমি ভাব হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পেটের উপরের দিকের মাঝখানে ব্যথা হতে পারে এবং সাধারণত পেট ভারী বোধ হয়। এই ধরনের ব্যথা কয়েক মিনিটেরও বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
এই ধরনের উপসর্গ থাকলে, দ্রুত যা করণীয়:
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল সঠিক সময়ে রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করা। সেক্ষেত্রে যে কোনও একটি কিংবা একাধিক লক্ষণ খেয়াল করলে অবিলম্বে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। অন্তত কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং রোগীর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হযচ্ছে, তাহলে শরীরে রক্ত প্রবাহ বজায় ঠিক করতে কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) শুরু করতে হবে।
চিকিত্সকদের মতে, যাঁরা ধূমপান করেন, কিংবা যাঁদের ডায়াবিটিসের মতো রোগ রয়েছে, তাঁদের সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এই রকম হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর বুকে তীব্র যন্ত্রণা হয় না, খুব বেশি এমনটা হলে রোগী অচৈতন্য হয়ে পড়েন। হার্ট অ্যাটাকের মূল উপসর্গ যেহেতু ব্যথা, আর এ ক্ষেত্রে কোনও রকম ব্যথা অনুভূত হয় না, তাই একে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’ বলা হয়।
বিদ্রঃ এই প্রতিবেদনটি শুধু মাত্র স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সচেতনতা মূলক প্রতিবেদন। শারীরিক কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।